রাশিদুল হাসান : আগস্ট মাসে কানাডার অর্থনীতিতে ভয়াবহভাবে রক্তক্ষরণ হয়েছে। দেশজুড়ে ৬৬ হাজার চাকরি হারিয়েছে মানুষ, আর বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশে। এটি করোনা মহামারির পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ৬.৬ শতাংশ, সেখান থেকে টানা বৃদ্ধি পেয়ে আগস্টে তা দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশে। মহামারির বছর ২০২০-২১ বাদ দিলে, এই হার সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালের মে মাসে।
অগাস্টে যে ৬৬ হাজার চাকরি হারিয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৬০ হাজারই ছিল খÐকালীন বা পার্ট-টাইম চাকরি। ফুল-টাইম চাকরিতে তেমন পরিবর্তন হয়নি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী কর্মীরা। যুবকদের কর্মসংস্থানে তেমন পরিবর্তন হয়নি, তবে তাদের বেকারত্বের হার উচ্চ পর্যায়েই রয়ে গেছে।
আগের মাসেও (জুলাইয়ে) অর্থনীতি থেকে ৪১ হাজার কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছিল। ফলে টানা দুই মাস ধরে কর্মসংস্থানের এই নেতিবাচক ধারা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে। রয়টার্সের এক জরিপে ধারণা করা হয়েছিল, আগস্টে ১০ হাজার চাকরি বাড়তে পারে এবং বেকারত্বের হার সামান্য বেড়ে ৭ শতাংশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র অনেকটাই ভিন্ন।
কনফারেন্স বোর্ড অব কানাডার প্রধান অর্থনীতিবিদ পেদ্রো আনতুনেস বলেন, “এখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ হঠাৎ চাকরি হারিয়েছেন। এতে শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা এবং হতাশা তৈরি হচ্ছে।”
অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় মানুষ—চাকরিতে থাকা বা চাকরি খুঁজছেন এমন ব্যক্তিদের হারও কমেছে। আগস্টে পার্টিসিপেশন রেট দাঁড়িয়েছে ৬৫.১ শতাংশে, যা মহামারির পর সর্বনিম্ন।
চাকরিহানির সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে সেইসব খাতে, যেগুলো সরাসরি শুল্ক-নীতির প্রভাবে রয়েছে। পরিবহন ও গুদাম খাতে কমেছে ২৩ হাজার চাকরি, উৎপাদন খাতে হারিয়েছে ১৯ হাজার চাকরি, আর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি খাতে কমেছে ২৬ হাজার কর্মসংস্থান।
অন্যদিকে নির্মাণ খাতে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে, নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার চাকরি। ভৌগোলিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কানাডার উৎপাদনশীল শহরগুলো। উইন্ডসর, অন্টারিওতে বেকারত্বের হার ১১.১ শতাংশে পৌঁছেছে এবং ওশাওয়াতে তা ৯ শতাংশে।
সুদের হারে প্রভাব
বিএমও ক্যাপিটাল মার্কেটসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডগলাস পোর্টার বলেন, “এটি সম্ভবত মহামারির পর থেকে শ্রমবাজারের সবচেয়ে দুর্বল রিপোর্ট। মূলত যেসব খাত বাণিজ্যযুদ্ধের চাপের মধ্যে আছে, সেগুলোতেই চাকরি ক্ষতির বড় ধাক্কা এসেছে।”
তিনি মনে করছেন, এই পরিস্থিতি ব্যাংক অব কানাডাকে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর সুদের হার কমানোর দিকে ঠেলে দিতে পারে। ইতিমধ্যে মানি মার্কেটসে ৯২ শতাংশ বিনিয়োগকারীই সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা ধরছেন।
যুক্তরাষ্ট্রেও মন্দার আভাস
দক্ষিণের প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। আগস্টে সেখানে বেকারত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩ শতাংশে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তারা মাত্র ২২ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি করেছে, যেখানে রেইটার্স জরিপে ধারণা করা হয়েছিল অন্তত ৭৫ হাজার চাকরি বাড়বে।
যুবকদের কর্মসংস্থান স্থবির
১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের কর্মসংস্থানে আগস্টে তেমন পরিবর্তন হয়নি। তাদের বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ১৪.৫ শতাংশে, যা জুলাইয়ের তুলনায় সামান্য কম হলেও এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়ে গেছে।
ছাত্রদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন সময়ে স্কুলে ফেরত যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ — যা ২০০৯ সালের পর সর্বোচ্চ।
ডেজার্ডিনস ব্যাংকের এক সা¤প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গিগ অর্থনীতির বিস্তার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি যুবকদের কর্মসংস্থানকে সবচেয়ে বেশি চাপে ফেলছে।
প্রতিবেদনের সহলেখক এল. জে. ভ্যালেন্সিয়া বলেন, “কানাডার অর্থনীতি এই দ্রæত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। ফলে চাকরির সুযোগ কমছে।” সূত্র : অটোয়া থেকে সিবিসি
