বিনোদন ডেস্ক : একটি ছবি, একটি ক্যাপশন আর তাতেই আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ল বর্ণবিদ্বেষের বিতর্ক। মিস ইউনিভার্স ২০২৫ প্রতিযোগিতায় ফিনল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করা সারাহ জাফসের একটি ভাইরাল ছবি ঘিরে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরের ক্ষোভ ও সমালোচনা। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে শেষ পর্যন্ত তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয় ‘মিস ফিনল্যান্ড’ খেতাব।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন ২২ বছর বয়সী সারাহ। ছবিতে দেখা যায়, তিনি চোখের কোণা টেনে ধরেছেন যা পূর্ব এশীয়দের ক্ষেত্রে বহুদিন ধরেই একটি অবমাননাকর ভঙ্গি হিসেবে বিবেচিত। বিতর্ক আরও তীব্র হয় ছবির ক্যাপশন ঘিরে, যেখানে লেখা ছিল “ইটিং উইথ চাইনিজ”।
এই পোস্ট মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে। অভিযোগ ওঠে, এটি এশীয়দের প্রতি স্পষ্ট বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ। ঘটনার জেরে মিস ফিনল্যান্ড সংস্থা সারাহর মুকুট কেড়ে নেয়। সংস্থার বিবৃতিতে জানায়,মিস ফিনল্যান্ড একজন রোল মডেল। সকল জাতি, গোষ্ঠী ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখানো তার দায়িত্ব। এই সিদ্ধান্ত কঠিন হলেও প্রয়োজনীয়।সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন ২২ বছর বয়সী সারাহ।
এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে ফিনল্যান্ডের জাতীয় বিমান সংস্থা ফিনএয়ারও। জাপানে ফিনএয়ারের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে সংস্থাটি জানায়, এই ধরনের মন্তব্য বা আচরণ তাদের মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে না। এমনকি ফিনল্যান্ড বয়কটের ডাকও ওঠে বিভিন্ন জায়গায়। ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেত্তেরি অর্পো প্রকাশ্যে এই ঘটনায় মন্তব্য করে বলেন, এই ধরনের অঙ্গভঙ্গি চিন্তাহীন ও নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, সারাহ জাফসে দাবি করেছেন, ছবির সময় তার মাথাব্যথা হচ্ছিল এবং সেটাই ছিল ওই ভঙ্গির কারণ। তার আরও দাবি, আপত্তিকর ক্যাপশনটি তার অজান্তেই এক বন্ধু যোগ করেছিলেন। ইনস্টাগ্রামে ক্ষমা চেয়ে তিনি লেখেন, এই ছবিটি অনেকের মনে কষ্ট দিয়েছে, তার জন্য আমি দুঃখিত। কাউকে অসম্মান করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। মানুষের পার্থক্য ও পরিচয়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এই ক্ষমাও সকলের মন জয় করতে পারেনি। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র ফিনিশ ভাষায় লেখা যা এশীয়দের প্রতি আন্তরিকতার অভাবের ইঙ্গিত দেয়। জাপানে বসবাসকারী এক জাপানি নাগরিক ফিনল্যান্ডে এশীয়দের প্রতি বৈষম্যের তদন্ত চেয়ে একটি পিটিশন শুরু করেছেন, যাতে ইতিমধ্যেই ৭ হাজারের বেশি স্বাক্ষর পড়েছে। জাপানে ফিনল্যান্ড দূতাবাসও স্বীকার করেছে দেশটিতে বর্ণবিদ্বেষ একটি বাস্তব সমস্যা, যার সমাধানে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
