অনলাইন ডেস্ক : কানাডা সরকার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর, ক্যালগেরি শহর নিজেকে জাতীয় প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ প্রযুক্তি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। তেল ও গ্যাস শিল্পের জন্য পরিচিত এই শহর এখন নতুন করে নজর কাড়ছে প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক বিমান শিল্পে তার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির কারণে।
ক্যালগেরি ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শহরটিতে ১৫৮টি কোম্পানি অ্যারোস্পেস ও প্রতিরক্ষা খাতে সক্রিয় রয়েছে। ২০২৪ সালে এই খাতটি আলবার্টা প্রদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৩.১ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছে।
ভিজওয়ারএক্স নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট জেফ লাফ্রেঞ্জ বলেন, “প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ খাতে অনেক কিছুই ঘটছে, যা অধিকাংশ মানুষ জানেন না।” তার প্রতিষ্ঠানের তৈরি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সফটওয়্যার সিস্টেমের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সুরক্ষিত অবস্থায় থেকে ভার্চুয়াল যুদ্ধ পরিকল্পনা করতে পারেন।
বোয়িং-এর নতুন উদ্যোগ ও ক্যালগেরির সম্ভাবনা
এই সপ্তাহে বোয়িং, অটোয়া এবং ক্যালগেরি ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট যৌথভাবে একটি নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে, যার লক্ষ্য হলো কানাডায় তৈরি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির দ্রুত বাণিজ্যিকীকরণ এবং স্থানীয় কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া সহজ করা।
এই উদ্যোগ বোয়িং-এর সেই চুক্তির অংশ, যার মাধ্যমে তারা কানাডার পুরনো সামুদ্রিক টহল বিমান প্রতিস্থাপন করবে এবং এর বিনিময়ে কানাডার প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে বাধ্য থাকবে।
বেসামরিক বিমান খাতেও জোয়ার
২০২৫ সালে ক্যালগেরিতে বেসামরিক বিমান খাতেও একাধিক বড় ঘোষণা এসেছে। ওয়েস্টজেট, কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম এয়ারলাইন, তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিমান অর্ডার দিয়েছে। লুফথানসা টেকনিক ক্যালগেরি বিমানবন্দরে একটি মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া, কানাডিয়ান অ্যাভিয়েশন ইলেকট্রনিক্স (সিএই) শহরে ১ লাখ ২৬ হাজার বর্গফুটের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করেছে।ডি হ্যাভিল্যান্ড কানাডা আগামী বসন্তে শহরের পূর্বদিকে ১,৫০০ একর জায়গায় একটি বিমান নির্মাণ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করবে, যা প্রতিষ্ঠানটির নতুন প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
চ্যালেঞ্জ: মানবসম্পদ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা
হেভিঅ্যারো নামের একটি রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিকোল হোলিনাটি বলেন, বেসামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে। “একটি বিমান ইঞ্জিন তো একটি বিমান ইঞ্জিনই,”- মন্তব্য করেন তিনি।
তবে প্রতিরক্ষা ঠিকাদার হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে, তা এখনো বড় বাধা। হোলিনাটি আশা করেন, বোয়িং-এর নতুন উদ্যোগ এই বাধা অতিক্রমে সহায়ক হবে।
মানবসম্পদের ঘাটতিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ডি হ্যাভিল্যান্ড কানাডার ভাইস প্রেসিডেন্ট নিল সুইনি জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০০ প্রকৌশলী কাজ করেন, যাদের অনেকেই অবসরের দ্বারপ্রান্তে। “এই ঘাটতি শুধু আলবার্টা নয়, পুরো কানাডার প্রতিরক্ষা শিল্পের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে,”—বলেন তিনি।
যদিও মন্ট্রিয়ল এখনো কানাডার প্রধান অ্যারোস্পেস কেন্দ্র (বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম), বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ক্যালগেরিও ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান শক্ত করছে। তবে এর জন্য প্রয়োজন আরও বেশি কারিগরি প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনবল। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জন গ্রাডেক বলেন, “সুযোগের অভাব নেই, অভাব আছে প্রতিভার।”
অটোয়ার প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি এবং ঘরোয়া শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতির ফলে ক্যালগেরি ও আলবার্টার জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। ভিজওয়ারএক্স-এর লাফ্রেঞ্জ বলেন, “আমরা চাইলে বিশ্বের যেকোনো জায়গার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি।” সূত্র : সিবিসি নিউজ

