অনলাইন ডেস্ক : টানা চতুর্থ দিনের মতো মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মার্কিন ডলারের বিপরীতে রেকর্ড দরপতনের মুখে পড়েছে ভারতীয় রুপি। এদিন এক ডলারের বিপরীতে রুপির মান নেমে দাঁড়ায় ৯০.৮২-এ, যা দেশটির মুদ্রাবাজারে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। এর ফলে এশিয়ার প্রধান মুদ্রাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল পারফরম্যান্সের তালিকায় উঠে এসেছে রুপি। সোমবার যেখানে এক ডলারের বিনিময়ে ৯০.৭৮ রুপি লেনদেন হচ্ছিল, মঙ্গলবার তা আরও অবনতি হয়ে বাজারে অস্থিরতা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গালফ নিউজ।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একাধিক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কারণে এই ঐতিহাসিক পতন ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা, বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস, শেয়ারবাজারের মন্দাভাব এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের তুলনামূলক সংযত নীতি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের এখনো কোনো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নেই, যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক নীতির কারণে ভারতের রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে রুপির ওপর।
এছাড়া ডিসেম্বর মাসেই বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার তুলে নিয়েছেন। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে রুপির পরিবর্তে ডলারের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। এতে স্থানীয় বাজারে রুপির চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
বাজার পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এই মুহূর্তে মুদ্রা রক্ষার চেয়ে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ফলে রুপির পতন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব বেশি আক্রমণাত্মক হস্তক্ষেপ করছে না। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের শেষ নাগাদ ডলারের বিপরীতে রুপির মান ৯১ ছুঁতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রুপির দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা ভারতের শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নভেম্বর মাসে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর থেকে নিফটি ৫০ সূচক প্রায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। প্রায় ৫ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল এই বাজারে মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
তথ্যসূত্র : গালফ নিউজ

