অনলাইন ডেস্ক : রাশিয়া আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে বলে সামরিক এই জোটের মহাসচিব মার্ক রুটে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া এখন থেকেই পশ্চিমা সমাজে গোপন হামলা বাড়াচ্ছে এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হলে পুরো ইউরোপ আরও বড় বিপদের মুখে পড়বে। আর তাই ন্যাটোকে এখনই যথাযথ প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, জার্মানিতে দেয়া এক ভাষণে মার্ক রুটে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া এখন থেকেই আমাদের সমাজের বিরুদ্ধে গোপন হামলা বাড়াচ্ছে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে এমন এক পরিসরের যুদ্ধের জন্য, যা আমাদের দাদা–নানাদের প্রজন্ম দেখেছিল’। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার আগের সতর্কতার সঙ্গে সুর মিলিয়েই তিনি এই মন্তব্য করেন। তবে তার এই মন্তব্যকে ‘উদ্ভট আতঙ্ক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে মস্কো।
এদিকে রুটের এই সতর্কবার্তা এমন সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন থামানোর পথ খুঁজছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই মাসের শুরুর দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধের কোনও পরিকল্পনা রাশিয়ার নেই, তবে ইউরোপ চাইলে বা যুদ্ধ শুরু করলে রাশিয়া ‘এখনই’ প্রস্তুত।
তবে এর আগেও অর্থাৎ ২০২২ সালের ঠিক আগেও মস্কো একই আশ্বাস দিয়েছিল। তখন রাশিয়া বলেছিল- তারা ইউক্রেনে আক্রমণ চালাবে না। তবে পরে দুই লাখ রুশ সেনা সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে এবং ব্যাপক হামলা শুরু করে। পুতিন আরও অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র যে শান্তি-উদ্যোগ নিচ্ছে, তাতে ইউরোপীয় দেশগুলো বাধা দিচ্ছে। মূলত ইউক্রেনের মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়া শান্তি পরিকল্পনায় যে পরিবর্তন আনতে চেয়েছে, তার প্রতি ইঙ্গিত করেই তিনি একথা বলেছেন।
কিন্তু পুতিনের এসব মন্তব্য আমলে নিতে নারাজ ন্যাটো মহাসচিব রুটে। জার্মানির রাজধানী বার্লিনে দেয়া বক্তব্যে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনকে সহায়তা করাই ইউরোপের নিরাপত্তার গ্যারান্টি। তার ভাষায়, ‘ভাবুন তো, পুতিনের উদ্দেশ্য সফল হলে কী হবে! ইউক্রেন রুশ দখলের অধীনে, ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সীমানা আরও দীর্ঘ হবে, আর আমাদের ওপর সামরিক হামলার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।’
গত তিন বছর ধরেই রাশিয়ার অর্থনীতি যুদ্ধ ব্যবস্থায় রূপ নিয়েছে, রুশ কারখানাগুলো ব্যাপকভাবে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরি করছে। কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ট্যাংক, ৫৫০টি সাঁজোয়া যান, ১২০টি ল্যানসেট ড্রোন এবং ৫০টির বেশি আর্টিলারি তৈরি করছে।
যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই উৎপাদনক্ষমতার ধারেকাছেও নেই। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপের কারখানাগুলোকে রাশিয়ার মতো উৎপাদন সক্ষমতায় পৌঁছাতে আরও বহু বছর লাগবে। এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্স ও জার্মানি ইতোমধ্যে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সামরিক সেবার ব্যবস্থা পুনরায় চালু করেছে।
এদিকে ন্যাটো সদস্যদেশগুলোর বিরুদ্ধে সাইবার হামলা, ভুল তথ্য ছড়ানো এবং বিমানবন্দর বা সামরিক ঘাঁটির কাছে ড্রোন পাঠানোর মতো ‘হাইব্রিড’ বা ‘গ্রে-জোন’ আক্রমণও এ বছর আরও বেড়েছে। তবে এসব উদ্বেগজনক হলেও, ন্যাটোর কোনও সদস্য রাষ্ট্রে রাশিয়ার সরাসরি সামরিক হামলা, বিশেষ করে ভূখণ্ড দখল ও মানুষকে হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটলে তা কয়েক গুণ বড় সংকট তৈরি করবে।
ন্যাটোতে ইউরোপের ৩০টি দেশ আছে, আর তাদের সঙ্গে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রও আছে। উত্তর আমেরিকার এই দুটি দেশই এই জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক সদস্য। ট্রাম্পের চাপের মুখে জোটের সদস্যরা সম্প্রতি সামরিক ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বার্লিনে রুটে বলেন, ‘ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনও টিকে আছে, কিন্তু যুদ্ধ আমাদের দরজায়। আমি শঙ্কিত— অনেকেই এই জরুরি পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, অনেকেই ভেবে নিচ্ছে আমাদের হাতে সময় আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাই প্রতিরক্ষা ব্যয় ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে হবে, সেনাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে।’

