অনলাইন ডেস্ক : প্রায় নয় মাস আগে বাংলাদেশ সেন্টারের মিলনায়তনে মহান একুশে ফেব্রুয়ারির পূন্য সন্ধ্যায় উচ্চারণের আত্মপ্রকাশ। সেই থেকে ‘কবিতার সুষমায় জীবনের আহ্বান’- এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে হাঁটি হাঁটি পা পা করে পথ হেঁটেছে উচ্চারণ। টরন্টোর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সুহৃদদের শুভেচ্ছায়, ভালবাসায়, সমর্থনে গঠনের প্রাথমিক অধ্যায় পার করে, উচ্চারণ দাঁড়িয়ে আছে বিকাশের এক নতুন অধ্যায়ে। সেই স্বপ্নময় পথচলার ধারাবাহিকতায় ৩০শে নভেম্বরের হিমেল সন্ধ্যায় আবারও আলোকিত হলো একই মিলনায়তন উচ্চারণের অনাড়ম্বর বর্ণিল আয়োজন ‘উচ্চারণ সন্ধ্যা’র প্রাণময়তায়।

সা¤প্রতিক সময়ে উচ্চারণে যুক্ত হওয়া নতুন সদস্যদের বরণ করে নেয়া, নব-গঠিত কার্যকরী কমিটির পরিচিতি, সংস্কৃতি-সুহৃদদের শুভেচ্ছা অভিব্যক্তি, উচ্চারণ উপদেষ্টাদের আশীর্বাণী, পৃষ্ঠপোষকদের কৃতজ্ঞতা পর্বের সাথে ছিল উচ্চারণের প্রাণের স্পন্দন – উচ্চারণ সদস্যদের কণ্ঠে কবিতার নিবেদন। কখনো একক, কখনো সমবেত, কখনো আবেগে, কখনো দ্রোহে- কবিতার সুষমায় উচ্চারণের বন্ধুরা ছুঁয়ে গেছেন বাংলা কবিতার ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য।
উচ্চারণ-এর থিম কবিতা ‘ভালবাসা রঙে বোনা উচ্চারণ’-এর আবৃত্তির মাধ্যমে শুরু হয় এই আয়োজন। জামিল বিন খলিলের গ্রন্থনা ও পরিকল্পনায় ও আরিয়ান হক ও তানিয়া নূরের সঞ্চালনায় উচ্চারণ সন্ধ্যায় স্বাগত বক্তব্যে উচ্চারণ দলনেতা রাশেদা মুনীর সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জানিয়ে উচ্চারণ-এর নয় মাসের পথচলার নানা দিক তুলে ধরেন ও এই পথচলায় সবার অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন।
এরপরেই ছিল নতুন সদসদের বরণ করে নেয়ার পর্ব। দলনেতা রাশেদা মুনীর ও উচ্চারণ উপদেষ্টা কবি ডঃ বাদল ঘোষ উত্তরীয় পরিয়ে নতুন সদস্যদের উচ্চারণ পরিবারে স্বাগত জানান। উল্লেখ করা যেতে পারে, সা¤প্রতিক সময়ে উচ্চারণে যুক্ত হওয়া আট নতুন সদস্য হচ্ছেন- সারা জাহান, শ্যামল ঘোষ, আঁখি ভদ্র, মারুফ হোসেন, গোলাম মহিউদ্দিন, পারমিতা তিন্নি, তন্ময় রহমান ও কানিজ জলি লাবণী। নতুনদের স্বাগত জানিয়ে ডঃ বাদল ঘোষ তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে এই অন্তর্ভুক্তি উচ্চারণকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং শুদ্ধ আবৃত্তিচর্চায় উচ্চারণ আরও বেগবান হবে বলে বলে আশা প্রকাশ করেন।
উচ্চারণের নবগঠিত কার্যকরী কমিটির পরিচিতি পর্বে প্রথম কমিটিকে উত্তরীয় পরিয়ে অভিনন্দন জানান উচ্চারণ উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী সৈয়দ ইকবাল। শুভেচ্ছা বক্তব্যে জনাব সৈয়দ ইকবাল সদ্য গঠিত কমিটির পাঁচ সদস্য নাজমা কাজী, আরিয়ান হক, ম্যাক আজাদ, জামিল বিন খলিল ও দলনেতা রাশেদা মুনীর-কে অভিনন্দন জানান ও এই কমিটি উচ্চারণের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সম্ভাব্য সকল পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে শুভেচ্ছা অভিব্যক্তি জানিয়েছেন বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ বাংলাদেশ টেলিভশনের সাবেক স্বনামধন্য সংবাদ পাঠিকা আসমা আহমেদ মাসুদ ও অন্যস্বর ও অন্য থিয়েটার টরন্টোর কর্ণধার আহমেদ হোসেন। কবিতার আলো ছড়িয়ে দিতে ও আবৃত্তির শুদ্ধ চর্চায় উচ্চারণ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আসমা আহমেদ মাসুদ উচ্চারণের ভাল কাজের সাথে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পথহাঁটার উপর গুরুত্ব দিয়ে অন্যস্বর কর্ণধার আহমেদ হোসেন উচ্চারণ-সহ প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর সাথে যূথবদ্ধ কাজ করার আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন।
উচ্চারণ সন্ধ্যার দুই সম্মানিত পৃষ্ঠপোষক ব্যারিস্টার সূর্য চক্রবর্তী ও ওয়াজির হোসেন মুরাদ-কে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উচ্চারণের উত্তরীয় পরিয়ে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে উচ্চারণ সদস্যদের প্রকাশিত কবিতার বই তুলে দেন উচ্চারণ উপদেষ্টা সমাজকর্মী মির্জা রহমান। তিনি সম্মানিত পৃষ্ঠপোষকদের উচ্চারণের পাশে থাকায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ও এভাবেই সবার সহযোগিতায় উচ্চারণ আরও অনেক পথ পাড়ি দিবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শুভেচ্ছা অভিব্যক্তিতে ব্যারিস্টার সূর্য চক্রবর্তী উচ্চারণ সন্ধ্যায় সবাইকে শুভেচ্ছা জানান এবং ভবিষ্যতেও বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় কমিউনিটির আলোকিত উদ্যোগে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এই আয়োজনের অপর পৃষ্ঠপোষক আমাজন ইমিগ্রেশন ও শিকড় টিভির কর্নধার উচ্চারণ সদস্য ওয়াজির হোসেন মুরাদ আবৃত্তি চর্চার প্রসারে উচ্চারণ নিরলস কাজ করে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে কবি শামসুর রাহমানের “তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতাটি পাঠ করেন।
এই আয়োজনে মিষ্টিমুখ ও হ্যাপি কিচেনের সৌজন্যে নানা মজাদার খাবার সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। উচ্চারণের মঞ্চে এই দুই প্রতিষ্ঠানের কর্নধার যথাক্রমে কবিতা শা ও শারমিন আক্তার হ্যাপিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
আবৃত্তি পর্বে অংশগ্রহন করেন সারা জাহান, শ্যামল ঘোষ, আঁখি ভদ্র, মারুফ হোসেন, গোলাম মহিউদ্দিন, পারমিতা তিন্নি, জিনাত বাশার, সৈয়দা রোখসানা বেগম, শামীমা হুমায়েরা, ফারহানা আহমেদ, ম্যাক আজাদ, শিখা আহমাদ, নাজমা কাজী ও ফ্লোরা নাসরিন ইভা। বিজয়ের মাসের প্রাক্কালে এই সন্ধ্যায় কবিতার মাধ্যমে একাত্তরের সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে আবৃত্তি পর্ব শেষ করা হয় এবং সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে উচ্চারণ সন্ধ্যার আয়োজন শেষ হয়।

উচ্চারণ সন্ধ্যায় টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুরাগী সুধীজনের প্রাণবন্ত উপস্থিতির জন্য উচ্চারণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। জামিল বিন খলিল- কার্যকরী পরিষদের সদস্য, উচ্চারণ

